২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, রাত ৩:২৪
।। ড. মিল্টন বিশ্বাসের সাহিত্য জীবন ।।
শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

. মিল্টন বিশ্বাস

অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ

ইমেইল : writermiltonbiswas@gmail.com

. মিল্টন বিশ্বাসের জীবন ও কর্মকথার রূপরেখা :

. মিল্টন বিশ্বাস বাংলাদেশের পাবনা অঞ্চলের একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি, বর্তমানে তাঁর বসতি গাজীপুরে তাঁর পিতা ছিলেন একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পিতামহও ছিলেন স্কুল শিক্ষক, যা তাঁর শিক্ষার প্রতি প্রাথমিক আগ্রহ মনোভাবের ভিত্তি তৈরি করেতাঁর শৈশব কিশোরাবস্থা আল্লাহদর্গা ভেড়ামারা এলাকায় কেটেছে ছোটবেলা থেকেই তাঁর লড়াই, অধ্যবসায় স্বপ্ন দেখা শুরু হয়, যেখানে তিনি গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠেন এই পরিবেশে তিনি কঠোরতা, ধৈর্য পরিশ্রমের মূল্য বুঝতে শিখেছেন এখানে থেকে তিনি ভেড়ামারা কলেজে অধ্যয়ন করেন, যেখানে তাঁর শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয় এই সময় থেকেই তার মনোভাব অধ্যবসায় তাঁকে উচ্চশিক্ষার পথে চালিত করে তিনি অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন সেখানে তিনি অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো ত্যাগ পরিশ্রমের মাধ্যমে তাঁর দক্ষতা জ্ঞানসম্মত ভিত্তি গড়ে তুলেছেন শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং নিজের জন্য উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন নিজেকে গড়ে তোলার এই সংগ্রামে তিনি শুধু ব্যক্তিগত আর অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন না, বরং তাঁর স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য কিছু করতে পারার তারপর থেকে, তাঁর জীবন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে তিনি বিভিন্ন দেশের শিক্ষা-সাহিত্য, গবেষণা সমাজসেবার সঙ্গে জড়িত হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করেন আজ, তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে দেশের সুনাম বাড়াচ্ছেন এবং বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করছেন তাঁর জীবনকাহিনি আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস, যা শেখায় তা হলো- কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় লক্ষ্য সততার প্রচেষ্টার মাধ্যমে কেবল স্বদেশে নয়, বরং গোটা বিশ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব

 

১. পরিচিতি

অধ্যাপক . মিল্টন বিশ্বাস বাংলা সাহিত্য, গবেষণা শিক্ষাক্ষেত্রের এক অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব তাঁর জীবনী কর্মজীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে এক উজ্জ্বল কর্মসংস্কৃতি, যা শিক্ষার্থী, গবেষক, কলামিস্ট সমাজসেবীসকলের জন্য অনুপ্রেরণা স্বরূপ এই প্রবন্ধে তাঁর ব্যক্তিগত একাডেমিক জীবন, শিক্ষাগত সাফল্য, সাহিত্যকর্ম, গবেষণা, সামাজিক আন্তর্জাতিক অবদান বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে

২. সারসংক্ষেপ

অধ্যাপক . মিল্টন বিশ্বাসের জীবনী বাংলাদেশের একাডেমিক সাহিত্য ক্ষেত্রের এক উজ্জ্বল মানচিত্র খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল মেধাবী গবেষক এবং লেখক হিসেবে গড়ে উঠেছেন

মূল বিষয়সমূহ:

ক) ব্যক্তিগত একাডেমিক পটভূমি:  ৮ই ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন এবং ইউজিসি পোস্ট ডক্টোরাল সম্পন্ন

খ) পেশাগত কর্মজীবন: ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে নটর ডেম কলেজে শিক্ষকতা শুরু করে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সদ্য সাবেক বিভাগীয় প্রধান তিনি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন।

গ) সাহিত্যকর্ম গবেষণা: ২৫টিরও বেশি গ্রন্থ, ৪৭টি গবেষণা প্রবন্ধ, ৪ হাজারেরও বেশি কলাম, সাবঅল্টার্ন তত্ত্ব উত্তর-আধুনিক গবেষণায় পথপ্রদর্শক।

ঘ) সামাজিক আন্তর্জাতিক অবদান: বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য, ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্ট (ইসিটি)-এর সেক্রেটারি, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সক্রেটারি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনার বইমেলার অতিথি

ঙ) পুরস্কার সম্মাননা:আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণ পদক২০২৩এবংদীনেশরবীন্দ্র পত্র সম্মাননা ২০২৩দীনেশনিবেদিতা পত্র সম্মাননা ২০২৪  সহ অন্যান্য স্বীকৃতি

৩. জীবনী ব্যক্তিগত পটভূমি :

অধ্যাপক . মিল্টন বিশ্বাসের জন্ম ৮ই ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী পরিবারে, পাবনা শহরে পিতা: সঞ্জয় বিশ্বাস, মাতা : মুক্তি বিশ্বাস। তাঁর পারিবারিক পটভূমি শিক্ষার প্রতি প্রবল আকর্ষণ একাগ্রতার প্রতিফলন ঘটিয়েছে ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়ালেখায় উৎসাহী ছিলেন এবং খুব সততার সঙ্গে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে উৎকর্ষ সাধন করেছেনতাঁর ব্যক্তিগত জীবনে, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মানবিক মূল্যবোধের সুর নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা প্রদান সামাজিক দায়বদ্ধতায় উদ্বুদ্ধ করে তাঁর জীবনীতে দেখা যায় যে ব্যক্তিগত সংগ্রাম অধ্যবসায়ের মিশেলে তিনি একাডেমিক পরিসরে সাহিত্যসৃজনে এক অভূতপূর্ব  কৃতিত্ব অর্জন করেছেন

৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা :

অধ্যাপক বিশ্বাসের শিক্ষাগত সাফল্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল সম্পন্ন করেন – “জীবনানন্দ দাশ বুদ্ধদেব বসুর কাব্যচিন্তাবিষয়ে ১৯৯৯ সালে এবং পরে ২০০৭ সালেতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষনিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেনএরপর তিনি ইউজিসি থেকে ফেলোশিপ পেয়ে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণার কাজ শেষ করেন।

৫. পেশাগত কর্মজীবন একাডেমিক অবদান :

নটর ডেম কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে অধ্যাপক বিশ্বাস ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং এরপর তাঁর একাডেমিক কর্মজীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় বর্তমানে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সদ্য সাবেক বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এছাড়া তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক ছিলেন। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (IUBAT—International University of Business Agriculture and Technology) সিন্ডিকেট সদস্য। তাঁর পেশাগত কর্মজীবনের বিভিন্ন দিকে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে:

ক) একাডেমিক নেতৃত্ব শিক্ষা:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করে একাডেমিক দিক থেকে প্রশংসিত সাফল্য অর্জন করেছেনবর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে শিক্ষা গবেষণার মান উন্নতিতে অবদান রেখেছেনবিভাগীয় প্রধান থাকাকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তিনি ১০(দশ)-এর অধিক জাতীয় আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেন দেশবিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেসব সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তা হিসেবে যোগদান করে শিল্পসাহিত্য অঙ্গনে নতুন ভাবনার উন্মেষ ঘটান

খ) গবেষণামূলক কাজ :

তাঁর গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো সাবঅল্টার্ন তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ছোটগল্প সাহিত্য বিশ্লেষণ, যা বাংলাদেশি সাহিত্যে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে ইউজিসি পোস্ট ডক্টোরাল ফেলোশিপের মাধ্যমে অতিরিক্ত গবেষণায় যুক্ত হয়ে তিনি চিন্তাভাবনা গবেষণার নতুন নতুন ধারার সূচনা করেছেনতাঁর অধীনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন গবেষক বিভাগের ইতিহাসে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তবে সবমিলিয়ে তাঁর অধীনে চারজন পিএইচডি এবং দুইজন এমফিল ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমানে তিনি একাধিক এমফিল-পিএইচডি গবেষকের গবেষণা-তত্ত্বাবধায়ক। 

গ) সেমিনার আলোচনা চক্র:

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার বইমেলায় তাঁর অংশগ্রহণ, বিশেষ করে নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা, তাঁর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভের প্রমাণসভা সেমিনারে বক্তৃতার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সাহিত্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করেন তিনি

অধ্যাপক বিশ্বাসের শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে একাডেমিক কর্মজীবনের প্রত্যেকটি ধাপ, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর অবদানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

৬. সাহিত্যকর্ম প্রকাশনা :

অধ্যাপক বিশ্বাস শুধুমাত্র একজন শিক্ষাবিদ গবেষক নন, তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যকর্মী কলামিস্ট হিসেবেও পরিচিত তাঁর সাহিত্য উদ্যোগে বিদ্যমান আছে মৌলিক গবেষণার মিশেলে রচিত ২৫টিরও বেশি গ্রন্থ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো: “শতবর্ষে রণজিৎ গুহ সাবঅল্টার্ন তত্ত্ব“(কলাবতী মুদ্রা, কলকাতা), “তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষ“(বাংলা একাডেমি), “রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশরাজ“(মূর্ধন্য) প্রভৃতি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে প্রায় অর্ধশত। তিনি একজন কবি। তাঁর প্রকাশিত ‘নন্দিনী’ এবং ‘নদী ও বুনোহাঁসের চিঠি’- দু’টি কাব্যগ্রন্থ জনপ্রিয় হয়েছে।

তাঁর নিয়মিত কলামিক কর্মকাণ্ডও অত্যন্ত প্রশংসনীয় চার হাজারেরও বেশি কলামের মাধ্যমে তিনি কাব্য, গল্প, সামাজিক রাজনৈতিক ইস্যুতে গভীর পর্যবেক্ষণ প্রদান করে চলেছেন তাঁর লেখনিতে নান্দনিক রুচির পাশাপাশি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তির ছাপ স্পষ্ট দেখা যায়

৭. গবেষণা সামাজিক অবদান :

অধ্যাপক বিশ্বাসের গবেষণা শুধুমাত্র সাহিত্যকর্মে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাঁর গবেষণার পরিধি সমাজ সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক

ক) সাবঅল্টার্ন তত্ত্ব সাহিত্যের বিশ্লেষণ:

তাঁর পিএইচডি গবেষণাপত্রতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষসাহিত্যে নিম্নবর্গের মানুষের অবস্থান এবং সামাজিক পরিবর্তনের দিক নিয়ে মূল্যবান সমীক্ষা প্রদান করেছেএই গবেষণার মাধ্যমে তিনি ঐতিহ্যগত সাহিত্যধারার বাইরে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন

খ) ইউজিসি পোস্ট ডক্টোরাল ফেলোশিপ:

অধ্যাপক বিশ্বাস ইউজিসি পোস্ট ডক্টোরাল ফেলোশিপ সম্পন্ন করে গবেষণার নতুন ধারাকে স্পর্শ করেছেন, যা তাঁকে আন্তর্জাতিক গবেষণা মঞ্চে পরিচিত করেছে

গ) সামাজিক মানবিক কাজ:

ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিষ্টান ট্রাস্ট(ইসিটি)-এর সেক্রেটারি হিসেবে তিনি মানবাধিকার ও খ্রিষ্টান সমাজ বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মানুষের অধিকার সংক্রান্ত নীতি নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন

তাঁর কলাম প্রবন্ধে সমাজের বিভিন্ন দুরাবস্থার ইস্যু, যেমন দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য মানবিক অধিকার নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ পাওয়া যায়, যা সমাজের ন্যায়বিচারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে

৮. আন্তর্জাতিক অবদান ডিজিটাল কর্মপ্রবাহ :

অধ্যাপক . মিল্টন বিশ্বাসের কর্মজীবন কেবলমাত্র দেশের ভিতরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাঁর অবদান স্বীকৃত

 ক) আন্তর্জাতিক সেমিনার বইমেলা:

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা, নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলাসহ বিভিন্ন সেমিনারে বিশেষ অতিথি বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করে তিনি বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন

তিনি বিশ্বের বহু দেশে সেমিনার কনফারেন্সে যোগ দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা ২০২৪ ৩৩তম আসরে বিশেষ অতিথি সেমিনার বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ২০২৫ সালে নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট (South Asia Institute, Heidelberg University)-এ বাংলা ও ইংরেজিতে দু’টি বক্তব্য প্রদান করেন।

মূলত গত এক দশক ধরে, তিনি এশিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ জুড়ে অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক শিক্ষা, সাহিত্য এবং শান্তি-প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে মূল বক্তব্য, সেমিনার উপস্থাপনা এবং প্রধান সম্মেলন ও বইমেলায় নেতৃত্বের ভূমিকা, যা বাংলা সাহিত্য, মানবাধিকার এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা ২০২৪-এ বিশেষ অতিথি হওয়া ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আসন অলঙ্কৃত করা এবং বঙ্গবিদ্যা আয়োজিত বাংলা সাহিত্য অনুষ্ঠানের মতো বিশিষ্ট সম্মেলনে সভাপতিত্ব করা, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তা হিসেবে অবদান রাখা।

মিল্টন বিশ্বাস ‘খ্রিস্টান কনফারেন্স অফ এশিয়া’ আয়োজিত (মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া) আন্তর্জাতিক শান্তি-প্রতিষ্ঠার সম্মেলনের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ভারত ও জার্মানিতে অনুষ্ঠিত সাহিত্যের উপর সেমিনারগুলিতেও অংশগ্রহণ করেন। যেখানে তিনি সাহিত্য-সামাজিক বিষয় এবং অনুবাদের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। এই ব্যস্ততার মাধ্যমে, তিনি সাহিত্য, মানবাধিকার এবং সামাজিক পরিবর্তনের উপর বিশ্বব্যাপী সংলাপকে উৎসাহিত করেন। আর এভাবেই তিনি আন্তর্জাতিক পণ্ডিত ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।

ভারতের ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রবহমান বাংলাচর্চার আয়োজনে পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশেষ বক্তা সভাপতিত্ব করার আমন্ত্রণ পান মিল্টন বিশ্বাস ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের আয়োজনেভারতীয় সংস্কৃতি: অতীত বর্তমাননিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র এবং এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার দমদম মতিঝিল কলেজের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রবহমান বাংলাচর্চার আরেকটি আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে অংশ নেন তিনি তিনি  ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ ডিরোজিও মেমোরিয়াল কলেজ এবং স্বপ্নরাগ পরিবারের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে ‘‘বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে দেশভাগের প্রতিক্রিয়া : বদলে যাওয়া ন্যারেটিভস’’ শীর্ষক বক্তব্য প্রদান করেন।

এছাড়াও ডক্টর মিল্টন বিশ্বাস মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্বিশত বর্ষ, চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের শতবর্ষ এবং কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসুর শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিশ্বভারতী (শান্তিনিকেতন) বাংলা বিভাগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রে ১৪ ১৫ মার্চ (২০২৪) বিশেষ অতিথি (বক্তা) হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৩ মার্চ(২০২৪) অপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি সুশীল কর কলেজে বক্তব্য প্রদান করেন . মিল্টন বিশ্বাস কলকাতার উপনিবেশ বিরোধী এবং কর্পোরেট বিরোধী প্ল্যাটফর্মজ্ঞানগঞ্জআয়োজিত একাধিক সেমিনার আলোচনা চক্রে অংশগ্রহণ করেছেন

তাঁর বক্তৃতা, আলোচনা প্যানেল সংলাপ আন্তর্জাতিক দর্শকদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি চিন্তার সঞ্চার করেছে

খ) ডিজিটাল অনলাইন নেটওয়ার্ক:

মিল্টন বিশ্বাস বিভিন্ন আধুনিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাহিত্য গবেষণা কর্মকে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রসারিত করে চলেছেন যেমন, www.writermiltonbiswas.com, www.blrcbd.com, booksbdonline.com, www.varsitynews.net greatinliterature.com – এই ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো পরিচালনার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন সাহিত্য, গবেষণা, সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক আঙ্গিকের বিষয়বস্তুসমূহ জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন এর মাধ্যমে তিনি ডিজিটাল যুগে সাহিত্য সংস্কৃতির বিস্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এই কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সাহিত্যচেতনা সৃষ্টি এবং গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরা হচ্ছে, যা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত

ইউটিউব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁর কলাম, বক্তৃতা গবেষণামূলক আলোচনা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যা তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে থাকে

গ) রাজনৈতিক সামাজিক বিশেষ কলাম:

সমাজ রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে তাঁর লেখা কলামগুলো যেমন প্রমাণ ছাড়া গ্রেপ্তার বা জাতীয় নীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে তাঁর বক্তব্য শক্তিশালী প্রাঞ্জল উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে গ্রেফতারের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি কলামে বলেনপ্রমাণ ছাড়া এসব গ্রেপ্তার থামাতেই হবে এই ধরনের লেখা থেকে তাঁর রাজনৈতিক সামাজিক দৃষ্টিকোণ স্পষ্ট হয়

৯. উপসংহার :

অধ্যাপক . মিল্টন বিশ্বাসের জীবন, শিক্ষা, সাহিত্যকর্ম গবেষণার প্রচেষ্টা এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রাম, একাগ্রতা এবং অধ্যবসায় শুধুমাত্র একাডেমিক চিন্তাভাবনায় নয়, সমাজ রাজনীতি, মানবাধিকার আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক বিশাল প্রভাব ফেলেছে তাঁর কাজের প্রধান দিকগুলো হলো:

ক) ব্যক্তিগত একাডেমিক সাফল্য:

খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম থেকে একাডেমিক কৃতিত্ব অর্জন গবেষণায় অগ্রগতি ।

খ) সাহিত্য কলামিক অবদান:

২৫ টিরও বেশি গ্রন্থ, অর্ধশত গবেষণা প্রবন্ধ এবং হাজারেরও বেশি কলাম, যা সমাজ জীবনে ও লেখনিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে ।

গ) গবেষণা সামাজিক কাজ:

সাবঅল্টার্ন তত্ত্ব, ইউজিসি ফেলোশিপ এবং মানবাধিকার প্রয়াসে তাঁর অবদান সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছে ।

ঘ) আন্তর্জাতিক ডিজিটাল অবদান:

আন্তর্জাতিক সেমিনার, বইমেলা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্ব আঙ্গিকে বাংলা সাহিত্য গবেষণার পরিচিতি বৃদ্ধি পেয়েছে ।

 

সামগ্রিক মূল্যায়ন :

  • অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের জীবনে শিক্ষার প্রাথমিক ধাপ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর অবদানের ধারাবাহিকতা দেখা যায়
  • তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা (এমফিল পিএইচডি) এবং গবেষণায় সাবঅল্টার্ন তত্ত্বের প্রয়োগ জাতীয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে
  • সাহিত্যকর্ম কলামিক লেখা সমাজ রাজনীতি, মানবিক অধিকার এবং সামাজিক ন্যায় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে
  • ডিজিটাল নেটওয়ার্ক এবং আন্তর্জাতিক সেমিনারের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্য গবেষণাকে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন

অধ্যাপক . মিল্টন বিশ্বাসের একাডেমিক সাহিত্যিক কর্মজীবন বাংলাদেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রগতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত তাঁর কর্মজীবনের প্রতিটি অধ্যায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি, গবেষণা, সাহিত্য নৈতিকতার মূল্যবোধকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে