২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, সকাল ১০:৪৬
মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে আলাপ
মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

বাংলা সাহিত্য-অঙ্গনে বহুমাত্রিকতা ও দেশজ আখ্যানের অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য মহাশ্বেতা দেবী স্বতন্ত্র ঘরানার লেখক হয়ে উঠেছেন। শুধুমাত্র উপমহাদেশে নয়, বিশ্বের নানা দেশে তাঁর সাহিত্যকর্ম পঠিত ও আলোচিত হচ্ছে। নোবেল পুরস্কার লাভের সম্ভাব্য তালিকায় নাম ওঠার গুঞ্জনও বাতাসে ভাসে। মহাশ্বেতা দেবী আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান লেখক এবং সংস্কৃতি ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি ইতিহাস ও রাজনীতির ভূমি থেকে যে-সাহিত্য রচনা শুরু করেন, তা কেবল শোষিতের আখ্যান নয় বরং স্বদেশীয় প্রতিবাদী চরিত্রের সন্নিবেশ বলা যায়। প্রতিবাদী মধ্যবিত্ত প্রান্তিক ও পাহাড়ি-বনাঞ্চলের জীবন ও যুদ্ধ, নৃগোষ্ঠীর স্বাদেশিক বীরগাথা আখ্যান রচনার পারদর্শিতা তাঁকে বিশিষ্ট করেছে।

মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ সালে বাংলাদেশের এক খ্যাতনামা পরিবারে। তাঁর বাবা মনীশ ঘটক বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং চাচা ঋত্বিক ঘটক ভারতের চলচ্চিত্রের এক ব্যতিক্রমী প্রতিভার শ্রদ্ধেয়জন। মহাশ্বেতা দেবী লেখাকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাস তাঁর সাহিত্যজীবনে সব সময়ই গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। তিনি মনে করতেন ইতিহাসের ভেতর থেকেই বের হয়ে আসে সমাজনীতি, অর্থনীতি এবং তার আনুষঙ্গিক লোকাচার, লোকজসংস্কৃতি, লোকায়ত জীবনব্যবস্থা। তাঁর প্রথমদিকের সাহিত্যকর্মে এই প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। তিনি ঐতিহাসিক পটভূমিকায় খুদাবক্স ও মোতির প্রেমের কাহিনী নিয়ে ১৯৫৬ সালে নটী উপন্যাসটি লেখেন। এছাড়া প্রথম পর্যায়ে তিনি লোকায়ত নৃত্য-সংগীতশিল্পীদের নিয়ে লিখেছেন মধুরে মধুর (১৯৫৮), সার্কাসের শিল্পীদের বৈচিত্র্যময় জীবন নিয়ে লেখেন প্রেমতারা (১৯৫৯)। এছাড়া যমুনা কী তীর (১৯৫৮), তিমির লগন (১৯৫৯), রূপরাখা (১৯৬০), বায়োস্কোপের বাক্স (১৯৬৪) প্রভৃতি উপন্যাস। তিনি রাজনীতি ও ইতিহাসের বিমিশ্রণে যেমন তুলে আনেন ঝাঁসির রানীর বীরত্বব্যঞ্জক স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্র তেমনি মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্বময় জীবনভাষ্য। এসব ভাবধারায় উল্লেখ্যযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- মধুরে মধুর (১৯৫৮), আঁধারমানিক (১৯৬৬), হাজার চুরাশির মা (১৯৭৪), অক্লান্ত কৌরব (১৯৮২), মার্ডারারের মা (১৯৯২) প্রভৃতি। মহাশ্বেতা দেবী প্রান্তিক আদিবাসী জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস রচনা করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন। এ ধারার উপন্যাসগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য : কবি বন্দ্যঘটি গাঞির জীবন ও মৃত্যু (১৯৬৭), অরণ্যের অধিকার (১৯৭৫), চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর (১৯৮০), বিরসা মুন্ডা (১৯৮১), টেরোড্যাকটিল, পূরণসহায় ও পিরথা (১৯৮৭),  সুরজ গাগরাই (১৯৮৩),  বন্দোবস্তি (১৯৮৯), ক্ষুধা (১৯৯২) এবং কৈবর্ত খ- (১৯৯৪)।

মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যকর্ম ইংরেজি, জার্মান, জাপানি, ফরাসি এবং ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো বই ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে; যেমন- হিন্দি, অসমীয়া, তেলুগু, গুজরাতী, মারাঠী, মালয়মি, পাঞ্জাবি, ওড়িয়া এবং আদিবাসী হো ভাষা। ১৯৭৯ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান অরণ্যের অধিকার-উপন্যাসটির জন্য। ভুবনমোহিনী দেবী পদক, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য স্বর্ণপদক, ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ পদক পান। এছাড়া জগত্তারিণী পুরস্কার, বিভূতিভূষণ স্মৃতি সংসদ পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত লীলা পুরস্কারও লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে ম্যাগসাসাই পুরস্কার পান আদিবাসীদের মাঝে কাজ করার জন্য। ১৯৯৮ সালে সাম্মানিক ডক্টরেট পান রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভারতীয় ভাষা পরিষদ সম্মাননা ২০০১ অর্জনসহ আরও অনেক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

এই বিশিষ্ট লেখক বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০৯ সালে ‘ছবিমেলা’ নামের একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে। অনুষ্ঠানটি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের ছিল এবং সেই সঙ্গে বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন। সে সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য বরেণ্য কথাশিল্পী মহাশ্বেতা দেবীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তাঁদের সেই আলাপচারিতায় সাহিত্য প্রসঙ্গ ছাড়াও প্রকাশ পায় মানবিক অধিকার বোধ এবং সামাজিক ক্ষমতায়নের নানা দিক। সাক্ষাতকারটি শ্রুতিলিখন এবং গ্রন্থনা করেছেন বদরুন নাহার।

শামসুজ্জামান খান : আন্তর্জাতিক ‘ছবিমেলা’ ও বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা সম্পর্কে আপনার অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।

মহাশ্বেতা দেবী : এই ছবিমেলার মত একটা জিনিস আমি আগে কখনও দেখিনি। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে এটা একটা মস্ত বড় নতুন দিকদর্শনও বটে। কেননা স্থিরচিত্র জিনিসটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্থিরচিত্র তো চলচ্চিত্র নয়। আর  স্থিরচিত্র আছে বলেই পুরোনো ছবিতে আমরা আমাদের বিগত পঞ্চাশ-ষাট বছরের বা তার চেয়ে দীর্ঘ সময়ের একটা ইতিহাস তার মধ্যেই ধরা আছে দেখতে পাই।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী রকম ছিল, ওই ছবিতেই তা দেখতে পাই। এরকম অনেক অনেক কিছু আছে। বিগত দিনের  যে সমস্ত লোক – কী সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কী ইতিহাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সেগুলো জানতে হলে স্থিরচিত্রই অবলম্বন। এমন কি আমাদের যে রবীন্দ্রনাথ; রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেও স্থিরচিত্রই একেবারে প্রধান অবলম্বন। স্থিরচিত্রের ভূমিকা এবং গুরুত্ব তাই অসামান্য।

– স্থিরচিত্র কিন্তু ইতিহাসকে বাক্সময়ও করে তাহলে…

: আমি সেই কথাই বলছি; স্থিরচিত্র এক অর্থে একটা মুভমেন্ট। সেটা স্থির দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু সেটা যেসব চিন্তাকে ধারণ করে, সেগুলো তো চলতে থাকে। তাই মনে হয়েছিল এ-বিষয়ে আমি ফিরে গিয়ে লিখব। এখানে যেটা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা তো? সে ছবির কোয়্যালিটি যাই হোক না কেন তা একটা সময়ের চলমান জীবনকেই স্থিরচিত্র। আমাদের গ্রামের মানুষরাও তো ছবি তোলে, কাজেই গ্রাম থেকে বা অন্যান্য জায়গা থেকে তারা যদি এরকম স্থিরচিত্রের প্রদর্শনী করে, সেটাও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নেবে। কারণ আমাদের সংস্কৃতি আন্দোলনে কিন্তু এখনও স্থিরচিত্রের প্রদর্শনী সেই রকম গুরুত্ব পায়নি।

– কিন্তু আমাদের ইতিহাস নির্মাণে তো এর বিশেষ অবদান আছে।

: অবদান অসামান্য। অসামান্য বলেই বলছি, দৃক-এর এই স্থিরচিত্র প্রদর্শনীতে যা দেখলাম তা দেখে আমার দেখে মনে হচ্ছিল আজকে যদি এই স্থিরচিত্রের যে প্রদর্শনী সেটা নিয়ে আমি যদি খবরের কাগজে লিখি  লিখে যদি সকলের কাছে আবেদন করি এ ধরনের প্রদর্শনী করুন তাহলে ইতিহাস সমৃদ্ধ হবে। গ্রামে যারা আছে তারা যদি লিখে, তারা যদি ছবি তুলে দেখায় আমরা হয়তো নতুন চিন্তার খোঁজ পাব। আমি বলছি যে লিখে না কেন?  লেখা থেকে ছবি তোলা সেটাও তো একটা বড় কাজ। কাজেই সে ধরনের কাজ গ্রাম থেকে আসুক, সব জায়গা থেকে আসুক। ঢাকা থেকেই আসতে হবে, কলকাতা থেকেই আসতে হবে, সেটার তো কোন মানে নেই। যে কোন জায়গা থেকে আসতে পারে। সে-কাজও কিন্তু ইতিহাসকে ধরে রাখবে। এটা খুব দরকার।

– আর বাংলা একাডেমির বইমেলা সম্পর্কে কিছু বলবেন?

: বাংলাদেশে যে বইমেলা হয় একুশে ফেব্রুয়ারিতে মাসব্যাপী, তার গুরুত্ব ক-ত বড়! বাংলাভাষী মানুষদের কাছে তো বটেই, তার বাইরেও তার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আপনাদের যে লেভেলের বইমেলা হয়, এ বইমেলা তো আপনাদের একার নয়, তাতে আমরা যারা আনন্দ পাই, বাংলাভাষী যারা, বাংলা লিখি যারা সকলেরই পক্ষেই খুব বড় প্রাপ্তি।

– বিশেষ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার এবং সুস্থ মানবিক মূল্যবোধ গঠন ও মৌলবাদবিরোধিতায় এর ভূমিকা…

: বিরাট। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সম্পর্কে আমরা যদি ভাবি অসাম্প্রদায়িক সে কথা বলতে..

– দ্বিধা নেই..

:  দ্বিধা নেই না, দু’বার বলার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘সাম্প্রদায়িক’ শব্দটা উচ্চারণ করাই অপরাধ। সেই করবে যে জানে না। বাংলাদেশকে বিশেষ করে আমি কেন অসাম্প্রদায়িক বলব, আমরা তো জানিই। বাঙালি বাঙালিই। মূলে, নিম্নবর্গে কোন সম্প্রদায় ভেদাভেদ নেই।

– সাধারণ মানুষ কিন্তু…

: তাই তো বল্লাম সাধারণ লোক একেবারেই অন্যরকম, একেবারেই অসাম্প্রদায়িক, সেকথা কি আর বলতে হবে? আমি তো পাশের রাজ্যেই বাস করি। সেগুলো তো আছেই। এসব দিক থেকে বাংলাদেশ কিন্তু অনেক উপরে , একটা খুব সঠিক  জায়গায়, খুব উঁচুতে। সেইখানে বইমেলা, একটা দেশ, ভাষার কারণে সে স্বতন্ত্র দেশ, স্বতন্ত্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি পেল। একটা দেশ ভাষার কারণে তার স্বাধীনতা আন্দোলন সফল হল; পৃথিবীতে এর কোন দ্বিতীয় নজির নেই।

– হাজার বছর বাঙালি যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিল, বাংলাদেশে তা বাস্তবায়িত হয়েছে।

: একেবারেই। বাংলাদেশে তা বাস্তবায়িত হল, কিন্তু তা ভাষার জন্য। বাংলা পড়ব, বাংলায় লিখব তার কারণে। কী একটা অসামান্য ভালবাসা ভাষার জন্য। এর দরুন আমাদের মনোবল কত বেড়ে গেছে এবং আমাদের, যারা তরুণ প্রজন্ম, তারাও কত প্রাণিত, সেটা বলা যায়। সেই বইমেলায় এলাম। জীবন যেন ধন্য হয়ে গেল। আর একবার আসতে পারব কিনা সেটা তো জানি না। এই বইমেলায় এখানকার বাঙালির গভীর আবেগ তুলনাহীন। উদ্বোধন বক্তৃতায় হাসিনা কী অসামান্য বললেন। এত চমৎকার লাগল আমার, তাঁর ভাষণ। বারবার তিনি কীভাবে বইমেলার সঙ্গে তাঁর প্রগাঢ় একাত্মতা, বইমেলা তাঁর কাছে যে কী সেটা বললেন। বই তাঁর কাছে যে কী তা বললেন বারবার। আর যে সব কথা বললেন, বইমেলায় বাংলা একাডেমির মাধ্যমে তিনি কী চান  চাইছেন, এটাই বড় সুন্দর করে বল্লেন। চাইলেই তো জিনিসটা লোকে পেয়ে যায় না। তিনি বললেন যে যারা প্রতিবন্ধী তারাও যেন পড়ার সুযোগ পায়। বইমেলায় তাদের জন্যও যেন আয়োজন থাকে  থাকে শিশুদের জন্যও…

– ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর কথাও বললেন…

: ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো এগিয়ে এসেছে, প্রত্যেকের মনে স্বাধীনতা শব্দটিকে বইমেলার মাধ্যমে তিনি অসামান্য ব্যাপ্তি দিয়েছেন তাঁর ভাষণে।

– প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা খুব কমপ্রিহেনসিভ ছিল..

: প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা এত যুক্তিপূর্ণ, এত চমৎকার! আমরা তো নিজেরাই খুব আপ্লুত হয়ে আছি মনে মনে। পৃথিবীতে কোন্ দেশে দেখেছি, আমি তো তাঁরই পাশের দেশ ভারতবর্ষের, সেখানে আমি থাকি পশ্চিমবঙ্গে। হাসিনার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, তারপর বিদেশি মন্ত্রক, এই সমস্ত এক একজন মহিলার দায়িত্বে; এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হয়?

– এটা একটা নবজাগরণ..

: বিশাল.. বিশাল, কৃষিমন্ত্রীও একজন মহিলা।

– এবং অসাধারণ তিনি

: তিনটা এত বড় গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনজন মহিলা। তারপর যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞাস করে, আপনি মানে নারী স্বাধীনতা বিষয়ে কী ভাবছেন? ভাবাটা অন্য জিনিস, নারী স্বাধীনতা বিষয়ে অনেক কিছুই ভাবতে পারে অনেকে, কিন্তু হাসিনা তো এটা করে দেখিয়ে দিলেন। এতে বোধ হয় আরেকটা জিনিসও নিশ্চিত করল, এটা বলছি আমি, যদিও আমি ভারতীয়, যদিও আমি পশ্চিমবাংলায় থাকি, মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ব্যাপারটা উনি নিশ্চিত করলেন। কেননা মেয়েরা অনেক সঠিকভাবে কাজ করেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে মহিলারা থাকলে কাজ খুব সঠিক ভাবে হবে।

– এবং উনি যেগুলো বলেছেন সেগুলো রেটোরিক্স শুধু না, বাস্তবে দেখিয়ে দিলেন মেয়েদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে।

: হাসিনা একবারেই রেটোরিক্স নিয়ে বলার মানুষ নয়। একেবারেই অন্যরকম মানুষ। অসামান্য তাঁর আন্তরিকতা, চিন্তার স্বচ্ছতা; আর কত দুঃখের ভেতর দিয়েই সে এসেছে। এ ভয়ংকর দুঃখের অভিজ্ঞতা মধ্যে দিয়ে এসেছে।

– ওই পোড় খাওয়া মানুষ বলেই বোধ হয় জীবনের সঙ্গে এত গভীরভাবে জড়িয়ে গেছেন।

:  যাকে বলে ‘রুটেড ইনটু দ্যা সয়েল’। তাঁর পা দুটি মাটিতে প্রোথিত, আকাশে নয়। সে কোন স্বপ্নের জগতে বিচরণ করে না, সে জানে যে দেশ কী, তার মানুষ কী, তাঁর জন্য কী করতে হবে।

– আপনি তো ঢাকারই মেয়ে?

: ঢাকাতে জন্ম এই অর্থে তাই। আমার বাবার ছিল বদলির চাকরি। আমার ঠাকুরদা, তিনিও তাই। মা তাঁর প্রথম সন্তান গর্ভে, তাঁর বাবার বাড়িতে এসেছিলেন, অর্থাৎ আমার মাতামহ ঢাকায় থাকতেন, ওকালতি করতেন। তাঁর নাম নরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। অদ্ভুত যোগাযোগ আমার পিতামহ আর মাতামহ, দু’জনের গ্রামের বাড়ি নতুন বারেঙ্গা গ্রামে। তারা শৈশব থেকেই একসঙ্গে বড় হয়েছেন। এক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। সেই অবস্থাতেই দুই ভাইয়ের ছেলে আর মেয়ের সাথে বিবাহ হয়েছিল। আমার জন্মের সময় মা এসেছিলেন তাঁর বাবা-মার কাছে।

– বাঙালি পরিবারের রীতিই তো এটা ছিল।

: হ্যাঁ তাই। বাংলার বাইরেও অনেক জায়গায় আছে এ রীতি। আমাদের কাছে তো আছেই, এই সময় যাবে, সন্তান হবে। সেই সময় কিন্তু যতদূর শুনেছি লক্ষ্মীবাজারের বাড়িতে যখন তারা থাকতেন। কারণ আমার মাতামহ ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তখন নাকি আমি হয়েছিলাম। তাঁর অনেক পরে যখন তারা জিন্দাবাহার লেনে আসেন, সেই বাড়ির কথা আমার খুব মনে পড়ে, কেননা সেখানে আমি অনেক এসেছি, অনেক থেকেছি। তাই মনে পড়ে।

– আপনার পিতাও তো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন, সাহিত্যিক হিসাবে এবং সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে, মনীশ ঘটক।

: হ্যাঁ, আমার পিতামহ ছিলেন সুরেশ চন্দ্র ঘটক। তিনিও তখনকার দিনে সরকারি চাকুরিতে জয়েন করেছিলেন। তিনিও খুব স্কলার লোক ছিলেন। তিনি তিনটা সাবজেক্টে এম এ। ইংরেজি, ইতিহাস এবং সংস্কৃত। খুব ভালো রেজাল্ট ছিল। আমার বাবা মনীশ ঘটক তো লেখক, কবি এবং ঔপন্যাসিক এগুলো তো বটেই, তার সঙ্গে যেটা হচ্ছে সেই সময় কল্লোল নামে যে সাহিত্য আন্দোলন হয়। সে কল্লোল যুগের অন্যতম কবিও ছিলেন।

– আপনার মা-ও তো লেখিকা ছিলেন…

: আমার মাও লিখতেন, সে সমস্ত তো আছেই, সেটা আমাদের দু’দিকে সকলেই আছে। আমার বড় মামা ছিলেন শচীন চৌধুরী, তিনি বিখ্যাত ইকোনোমিক্যাল এন্ড পলিটিক্যাল উইকলি কাগজ; যা পৃথিবীতেই খুব পরিচিত তার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তাঁরা ঢাকা ইউনির্ভাসিটির ছাত্র। ঋত্বিক ঘটকের কথা বলতে পারি, সে তো আমার ছোট কাকা। কিন্তু আমাদের বয়স খুব কাছাকাছি। কাজেই আমরা দু’জনে দু’জনকে ‘তুই তুই’ বলে সম্বোধন করতাম।

– তিনি তো বাংলা সিনেমার একালের দিকপাল। আচ্ছা, এরপর আপনি তো লেখাপড়ার জন্য কলকাতা চলে গেলেন।

: হ্যাঁ। আমি ঢাকাতে কোনদিন লেখাপড়া করিনি। কারণ বাবার বদলির চাকুরি। বাবা যখন যেখানে তখন সেখানে পড়েছি। আমাকে দশ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনেই পাঠিয়ে দেন। ১৯৩৬ সালে আমি শান্তিনিকেতনে পড়তে যাই। যখন রবীন্দ্রনাথ জীবিত এবং খুবই সক্রিয়। সেই সময় চিত্রাঙ্গদা, চন্ডালিকা, তাসের দেশ এই সমস্ত তিনি রচনা করছেন। আমরা সেই সব দেখেছি। সেই সব শুনেছি। তাঁকে আমরা খুব কাছে পেয়েছি।

– এবং সেই সব অভিজ্ঞতা আপনার লেখক-জীবনকে প্রভাবিত করেছে নিশ্চয়ই।

: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই করেছে। না রবীন্দ্রনাথকে শুধু আমার লেখক জীবন বলে না, তাঁকে তো মনের মধ্যে বহন করে নিয়েছি। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথকে দেখার-জানার অভিজ্ঞতা তো এক জায়গায় শেষ হয় না।

– সাহিত্যজীবন শুরু কীভাবে হলো, একটু যদি বলেন।

: আমার পাগলামিও ছিল, ঝাঁসির রাণীর জীবনী লিখব বলে খুব জেদ হয়। খুব লেখাপড়া করি কষ্ট করে। তারপর একবার মনে হলো শুধু বই পড়লে হবে না। তখন আমার ছেলে খুব ছোট, তাকে তাঁর বাবার কাছে রেখে আমি গিয়েছিলাম ঝাঁসি-গোয়ালিয়র। এইসব ঘুরে ঘুরে দেখি। এইভাবে সেই বই লিখেছিলাম।

– মানে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁসির রাণীর যে অবদান, সেসব আপনি পরীক্ষা করেছেন, একদম সেইখানে গিয়ে…

: সেখানে গিয়ে দেখেছি ইতিহাসের দলিল-দস্তাবেজ, বিবিধ রেকর্ডপত্র  যা পাওয়া গেছে। ঝাঁসিতেও তাঁর যারা বংশের লোক সেখানে বেঁচে আছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তা থেকে অনেক কিছু বুঝে নিয়েছি।

– ওই বইটা পড়ে একটা কথা খুব মনে হয় যে, ওখান থেকেই আপনার লেখক জীবনের মোড় পরিবর্তন। নারীর যে ইতিহাস..

: আমার তো মোড় বলার তো কোন জায়গা নেই। কারণ আমার লেখক জীবনের সূচনাই সেই বই দিয়ে, কাজে প্রথমেই ওই রকম একজন আশ্চর্য রমণীকে আমি নির্বাচন করেছিলাম।

– সেইখানে ওই মতো উঁচুস্তরের একজন রাজনৈতিক নারীর যে চিন্তার স্বচ্ছতা, খরতা, দেশপ্রেম এগুলোকে আপনি যেভাবে তুলে আনলেন, তা বাংলা সাহিত্যে একটি ধারার পথিকৃতের কাজ বলে মনে হয়েছে।

: আমার কাজ ছিল লেখা, আমি লিখেছি। লেখাই তো আমার জীবিকা থেকেছে। জীবনও বটে, জীবিকাও বটে।

– ওই বইয়ে যেমন দেখলাম ঝাঁসির রাণীকে নিয়ে আপনি বড় একটি কাজ করেছেন, পরবর্তী পর্যায়ে আমরা দেখি আপনি নিচু স্তরের মানুষকে, এমন কি পতিতার মধ্যেও আপনি স্বদেশপ্রেম এবং রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক তাৎপর্য চিহ্নিত করার একটা প্রবণতা, স্বাধীনতার জন্য তাঁর জীবনদান করতেও প্রস্তুত এই জিনিসটা দেখেছেন..

: অবশ্যই.. অবশ্যই লক্ষ করেছেন তো..। যখন প্রথমবার বঙ্গভঙ্গ, ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট বাংলাকে ভাঙতে চেয়েছিল, যখন সমস্ত দেশজুড়ে আন্দোলন হচ্ছে.. তারপর থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক একটা স্টেজে যখন তাদের পালিয়ে থাকতে হয়েছে।

– সাম্প্রতিককালে যে নারীবাদী আন্দোলন এখন, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে আপনার নারীপ্রধান বইগুলো অসাধারণ তাৎপর্য বহন করে।

: হ্যাঁ, লিখেছি.. নিশ্চয়ই। মেয়েদের নিয়ে লিখেছি। এদেশে এসে দেখে ভাল লাগলো হাসিনা তিনটি গুরুত্বপর্ণ মন্ত্রী পদে মেয়েদের নির্বাচন করে নারীবাদী আন্দোলন যারা করেন, তাদের সামনে একটা দৃষ্টান্ত রেখে দিলেন।

– তিনি আপনার বিমুগ্ধ পাঠিকা..

: তিনি আমার বইয়ের খুব ভক্ত, অনেকদিন ধরেই পড়েন।  তিনি নিজেও লিখেন, সে খুব সাহিত্যপ্রাণ মানুষ।

– এবং বঙ্গবন্ধু নিজেও কিন্তু এ সমস্ত বই পড়তেন, প্রচুর বই পড়তেন..

: আমি জানি, নিশ্চয়ই। তিনি বাঙালি, আমিও বাঙালি। বাংলাতে বই লেখা হবে, তিনি পড়বেন না!

– আচ্ছা আপনি এই যে ‘তিতুমীর’ বইটি লিখলেন সে সম্পর্কে কি কিছু বলবেন?

: তিতুমীর লেখা খুব প্রয়োজন ছিল, তাই লিখেছিলাম। তিতুমীর অসামান্য মানুষই ছিলেন। এবার ঢাকা সফরে আমি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রণ বহন করে এনেছি। সেটা আমি হাসিনাকে দিয়েছি। যেখানে তিতুমীরের গ্রাম ছিল নারকেলবাড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগণায় – সেটা বাদুরিয়া পরগনার মধ্যে। বাদুরিয়া মোট কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অঞ্চল। সেখানকার একটা ছেলে নাম হচ্ছে বোধ হয় দিলওয়ার হোসেন, আমরা দিলু বলে ডাকি। সেই চিঠিটা দিয়েছে। প্রথমত হচ্ছে সে বহুদিন ধরে দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত। রাজনৈতিকভাবে সে ও তার বাবা খুবই এগিয়ে থাকা কর্মী। তিতুমীরের বংশ বলতে এখন যারা চিহ্নিত হন, সেই সমস্ত ইতিহাস নিয়ে। আমি তিতুমীরের জীবনটা – মানে এখন যে অবস্থা আছে আমি লিখে জানাব। অতি দরিদ্র তো তারা, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা। একটি ছেলেকে দিলু আরোগ্য লাভ করাল । দিলু ছেলেটাই এরকম। গোটা ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ কেন আমাদের বোধ হয় এশিয়া ভূ-খন্ডে সব থেকে প্রথম সঠিক থ্যালাসেমিয়া রোগের হাসপাতাল তৈরি করেছে এবং সেটা রাজীব গান্ধী হাসাপাতাল হবে।

– থ্যালাসেমিয়া মানে. ওই যে রক্তশূন্যতা রোগ হয়ে যায়..

: রক্তশূন্যতায় নতুন রক্ত তৈরি হয় না; রক্তশূন্যতা  মানে থ্যালাসেমিয়ায় খালি রক্ত দিলে তাতে হবে না। তার শরীররেই যাতে রক্ত তৈরি করতে পারে সে রকম সব করতে হবে। এটা একটা বিশাল ব্যয়সাধ্য চিকিৎসা। যেটা আমাদের বাংলাদেশে বা পশ্চিমবাংলায় আমাদের কারো করার সাধ্য নাই..

– আর্ন্তজাতিক একটা সমিতি আছে। তারা কিছুটা করে। আমাদের দেশে আসলেই খুব বেশি কিছু হয়না।

: হ্যাঁ সম্ভবত হয়নি। বাদুরিয়ায় একটা সঠিক থ্যালাসেমিয়া হাসপাতাল হচ্ছে।

– আচ্ছা আপনার ‘হাজার চুরাশির মা’ আমাদের আর একটা খুব প্রিয় উপন্যাস, নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে লেখা। সেখানেও বাঙালি শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনের যে ঠুনকো মূল্যবোধ; সেগুলোকে ভেঙে দিয়ে এক নারী সুজাতা, তাকে আপনি যেভাবে উচ্চতায়  তুলে আনলেন। মাতৃত্বে..

: না, গল্পটা সুজাতার নয়, আমি লিখেছি একটা উচ্চবিত্ত ঘরেরই নারীর কথা; হাজার চুরাশির মা লেখার পর কত মা আমাকে বলেছেন যে, এ তো আমার ছেলের গল্প। আপনি লিখলেন কী করে! তার মানে এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই, তখন কিন্তু কলকাতাতেই বেশি দেখেছি, পশ্চিমবাংলায় অন্যত্রও হয়েছে। কীভাবে ছেলেরা নিহত হয়েছে। এবং বহু ছেলের নাম, ছেলে না হয়ে নম্বর হয়ে গিয়েছিল। এই এক, দুই, তিন-চার করে আসছে যখন এখানে পৌঁছাবে তখন, আপনার ছেলের নাম হয়ত এখানে আছে। এটা আমি শুনেছিলাম। সুজাতা নামটা এরকম যে-কোন উচ্চবিত্ত ঘরের নারী, মানে মায়ের কথা।

– মানুষটা আর মানুষ থাকে না, নম্বর হয়ে যায়।

: ওতো নম্বর হয়ে গিয়েছিল। নম্বর এলেই বলতে পারবো তার কী হয়েছে।

– আপনার যে অন্য বইগুলো, ‘অগ্নিগভ-র্’ই বলি বা ‘চোট্টিমুন্ডা’ বলি, ‘অরণ্যের অধিকার’ বলি, ‘রুদালী’ বলি এইসব সম্পর্কে কী কিছু একটু বলবেন, আমাদের এইখানকার পাঠকরা কিন্তু খুব গভীরভাবে এইসব বই পড়ে।

: এইখান পাঠকদের খুব প্রিয় বই। আর চোট্টিমুন্ডা সম্পর্কে বলতে তো খুব ভাল লাগে এই জন্য, যে আমার লেখার এনার্জি, দম সব কিছুই খুব বেশি ছিল। এ গল্পটা ভীষণ বড় হয়ে গেল। এখলাসউদ্দীন আহমদ ওটা নিয়ে এলেন। এখান থেকেই তো ‘বিচিত্রা’ নামের তোমাদের কাগজে বের হলো। চোট্টিমুন্ডা খুব গুরুত্বপূর্ণ বই। আর আশ্চর্য হচ্ছে চোট্টি লোকটিকে আমি দেখেছিলাম। তার নাম চোট্টি নয়, তো ওই রকম একজন আশ্চর্য মুন্ডাকে দেখেছিলাম।

– এটা কি বিহারে, ছত্তিশগড়ে, এসব জায়গায় কাজ করার জন্য হয়েছে?

: না না, আমি যেখানটায় দেখেছিলাম সেটা আজকের যেটা ঝাড়খন্ড সেই অঞ্চলেই একটা জায়গার গ্রামীণ মেলায়। তীর ছোঁড়ার মেলা হয়। সে বসে আছে, দেখছে, কিছু বলছে না। তারপর দেখা গেল যখন দরকার সে কী নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করল। এটা দেখেছি। আর আমি তো ওদের মাঝে খুব মিশেছি। কাজেই এসব জিনিস খুব ভেতর থেকে দেখেছি।

– আপনি মধ্যপ্রদেশেও তো কাজ করেছেন?

: মধ্যপ্রদেশে না। মধ্যপ্রদেশে যখন পরে গেলাম । আমি তখন মহারাষ্ট্র, গুজরাট এই সব রাজ্য চষে বেড়াচ্ছি। সেটা অন্যরকম একটা আন্দোলন, সেটা হচ্ছে একেবারে স্বতন্ত্র। আদিবাসীদের নিয়েই, কিন্তু স্বতন্ত্র আন্দোলন। সেটা হচ্ছে যে ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট ১৮৭১ সালে যে-সব আদিবাসী শুধু অরণ্যজীবী ছিল কিন্তু চাষাবাদ করত না সেই সমস্ত লোকদের ‘জন্ম থেকেই অপরাধী’, ‘বর্ণ ক্রিমিন্যাল’ বলে জানিয়ে দিল। তার ফলে সমস্ত ভারত জুড়ে আজও তাদের সংখ্যা বহু জায়গায় আছে।

– ২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে যে অসাধারণ বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেটি গ্রন্থজগতের মানুষকে তো বটেই যারা রাজনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত তারাও অভিভূত হয়েছিল। অনেকে কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই ভাষণ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

: সে ভাষণটা আমি লিখিত নিয়ে যায়নি। সেটা এমন একটা ভাষণ যা আমি খুব খোলাখুলি বলেছিলাম। আমি যেটা বলেছিলাম, আমার প্রথম শব্দটা মনে আছে ‘প্রতিবাদের অধিকার পৃথিবীর যে-কোন জায়গায় মানুষের প্রথম মৌলিক অধিকার’। ‘ফাস্ট ফান্ডামেন্টাল রাইট ফর এনি হিউম্যান বিং অলওভার দ্যা ওর্য়াল্ড’।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *